কোরানের ফয়েজ কিএবং কেন?
কাগতিয়া সিলসিলায় কোরআনের ফয়েজ নামের একটি পদ্ধতি আছে। মুরীদেরা পীর মুখে মুখে বিশেষ একটি নিয়ত করে, চোখ বন্ধ অবস্থায়, যার যেখানে ছবক, সেখানে খেয়াল করে পীরের পিছনে দোজানু হয়ে বসে থাকবে থাকবে। তারপর, পীর সাহেব কোরআন তেলাওয়াত শুরু করবেন। এমন সময় মুরীদদের মধ্যে বিভিন্ন হালের সৃষ্টি হয় কেউ কাঁদতে থাকে, কেউ কাঁপতে থাকে। আর কেউ কেউ আল্লাহ্আল্লাহ্ রবে হাত পা আছড়াতে আছড়াতে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এটাকে ওয়াজ্দ বলে, মুলত কোরআনের শক্তি এবং নূর যখন প্রকৃত পীরদের পাক তাওয়াজ্জুর মাধ্যমে মুরীদদের ক্বরবে স্থান নিতে শুরু, তখন এ হালের সৃষ্টি হয়। আল্লাহ পাক ফরমান,“আমার মোমেনগণের নিকট যখন আমাকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের ক্বলব আমার ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।”
অনেকেই এ ওয়াজদ বা হালকে সামলিয়ে রাখতে পারে, সেজন্য তা প্রকাশ পায় না। এই ওয়াজদ বা হাল সম্পর্কে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) “সিররুর আসরার” কিতাবে লেখেন, ওয়াজদ দুই প্রকার। জেসমানী ও রুহানী অর্থাৎ দৈহিক ও আদ্যাত্মিক। লোক দেখানো এবাদত বন্দেগী করার প্রতি আসক্তি এবং নফ্সের বাধ্যগত হওয়া। এ জাতীয় ওযাজদ জায়েজ নয়। যে সমস্ত কাজ দ্বারা আল্লাহর প্রতি প্রেমাসক্তির সৃষ্টি হয় এবং অধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, তাকে রূহানী ওয়াজদ বলে, এটা শরীয়ত সম্মত। “মারাজাল বাহরাইন” কিতাবে আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভি (রঃ) বলেন, এ হাল বা ওয়াজদ সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও ছিল। যদি কোন ব্যক্তি ওয়াজ মাহফিলে কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির আজকারের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে, চিৎকার করে কাঁদে হাত-পা আছড়াতে বা লাফাতে থাকে তখন তাকে হিংসা করা উচিত নয়। কারণ, আলাহর দৃষ্টি, তখন তাঁর দিকে নির্দিষ্ট থাকে। সে সর্ম্পকে হযরত নবী করিম (সঃ) ফরমান, “প্রেমিক যখন আল্লাহর নূরে ফানা হয়ে যায়, তখন তার মুখ আল্লাহর মুখ, তাঁর দৃষ্টি আল্লাহর দৃষ্টি, তার পা আল্লাহর পা হয়ে যায়।” তিনি আরো ফরমান, মান-লা-ওয়াজাদা-লাহু-লা-দ্বীনা লাহু অর্থাৎ যার ওয়াজদ নেই, তার ধর্ম নেই।” হযরত ইমাম গজ্জালী (রঃ) বলেন, “যদি তোমার কোন ওয়াজদ বা হাল না হয়, তাহলে যার ওয়াজদ হচ্ছে, তার পাশে বসে যাও। কারণ আল্লাহর দৃষ্টি তখন তাঁর দিকে নির্দিষ্ট থাকে, ভাগ্যক্রমে তোমার প্রতিও পড়তে পারে।
No comments