Header Ads

ক্বলব কি? ছবক মানে কি?

প্রথম ছবক লাভে অলীর মর্যাদা

প্রকাশ থাকে যে, হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রঃ) এর আগে ত্বরিকত্বের মাশায়েখগণ মুরীদদেরকে পরিশুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রথমে লতিফায়ে “নফস” হতে তাওয়াজ্জুহ্ বা ছবক প্রদান শুরু করতেন এবং লতিফায়ে “ক্বলব” এ নিয়ে ছবক দেওয়া শেষ করে মুরীদদেরকে কামালিয়াতের দরজায় পৌঁছাতেন। ফলে সেই সময়ে স্বীয় মোর্শেদ কামেল থেকে ক্বলবের ছবক অতিক্রম করে মনজিলে মক্বছুদে যেতে মুরীদদের অনেক সময়ের প্রয়োজন হত। কিন্তু এত দীর্ঘ হায়াত অর্জন করে শেষ ছবক পর্যন্ত না পৌঁছে ইন্তেকাল করতেন। হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রঃ) এর জমানায় এ অসুবিধে দেখা দিলে তিনি আল্লাহর দরবারে অনেক রেয়াজত মোজাহেদা করার পর শেষ ছবককে প্রথমে এনে “লতিফায়ে ক্বলব থেকে মুরীদদেরকে ত্বরিকতের তা’লীম শুরু করার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হন।
উল্লেখ্য যে, হযরত মোজাদ্দেদ সাহেব ত্বরিকতের এ সংবিধান তৈরি করার পর, এটাকে প্রথমে “ত্বরিকায়ে আলীয়া নকশবন্দীয়ার” মধ্যে চালু করেছিলেন। পরবর্তীতে এই “ত্বরিকায়ে আলীয়া মোজাদ্দেদীয়া নামে খ্যতি অর্জন করলেও এতে এ সংবিধান বলবৎ থাকে। ফলে পর্যায়ক্রমে মোজদ্দেদীয়া ত্বরিকতের মাশায়েখগণ মোজাদ্দেদ সাহেবে সংবিধান মতে মুরীদদেরকে প্রথমে ক্বলবে তাওয়াজ্জুহ্ ও ফয়েজ প্রদান করতঃ ত্বরিকতের প্রাথমিক শিক্ষা “ক্বলব” থেকে দেওয়া শুরু করতে থাকে। ত্বরিকতের পরিভাষায় এই কাজকে “ইন্দিরাজুন নেহায়া ফীল বেদায়া” বলা হয়। অর্থাৎ ত্বরিকতের শেষ স্তরের ছবককে প্রথম স্তরের ছবকে প্রবেশ করানো।
এ সংবিধান মোজাদ্দেদীয়া ত্বরিকায় শেষ পর্যন্ত চালু থাকলেও কাদেরীয়া এবং অন্যান্য ত্বরিকতে এটার প্রচলন ছিলনা। পরে অন্যান্য ত্বরিকতেও এর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে, আমাদের ত্বরিকতের বিশিষ্ট ইমাম কুতুবুল আলম, ইমামুত ত্বরিকত হযরত শাহ্ সৈয়দ আবদুল বারী (রঃ) অন্যান্য ত্বরিকতেও এর প্রচলন করার জন্য আল্লাহর দরবারে অনেক রেয়াজত ও সাধনা করেন। যার ফলশ্র“তিতে কাদেরীয়া ত্বরিকাসহ আরো বিশেষ কয়েকটি ত্বরিকায় এ “ইন্দিরাজুন নেহায়া ফীল বেদায়া” সংবিধান চালু করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ও ত্বরিকতের ইমামগণের পক্ষ থেকে তিনি এজাজত প্রাপ্ত হন। ফলে তিনি কাদেরীয়া ত্বরিকাসহ অন্যান্য ত্বরিকায় এ সংবিধান জারী করে মুরীদেরকে প্রথমে ক্বলবে তাওয়াজ্জুহ ও ফয়েজ দিয়ে ত্বরিকত প্রাথমিক শিক্ষা “ক্বলব” থেকে শুরু করেন।(আয়নায়ে ওয়াইছী)
মুনিরীয়া সিলসিলা তথা আমাদের কাগতিয়ার হুজুর কেবলার (মঃ আঃ) এর এ কাদেরীয়া ত্বরিকতে বর্তমানে মুরীদেরকে প্রথমে ক্বলবে তাওয়াজ্জুহ্ ও ফয়েজ দিয়ে ছবক শুরু করা হয়, তা ইমামুত ত্বরিকত হযরত আবদুল বারী (রঃ) এর সংবিধান মতেই করা হয়। সেই হিসেবে আমাদের এ কাদেরীয়া ত্বরিকতকে “ইন্দেরাজুন নেহায়া ফীল বেদায়া” বিশিষ্ট ত্বরিকা বলা যেতে পারে। উক্ত আলোচনা থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল, আগে ত্বরিকতের কাজের যেখানে শেষ ছিল, বর্তমানে সেখান থেকে শুরু তৎকালীন সময়ে ত্বরিকতের শিক্ষার শেষ র্পযায়ে গিয়ে ত্বরিকত পন্থীরা স্বীয় মোর্শেদ থেকে ত্বরিকতের সেই নেয়ামত অর্জন করতেন, বর্তমানে তা আমরা আমাদের মোর্শেদ থেকে ত্বরিকতের সেই নেয়ামত অর্জন করতেন, বর্তমানে তা আমরা আমাদের মোর্শেদে বরহক থেকে ক্বলবের প্রথম ছবকেই অর্জন করি। আলহামদুলিল্লাহ। (আয়নায়ে ওয়াইছী)
উল্লেখ্য, তখনকার সময়ে ইলমে মারেফাতে পরিপূর্ণতা অর্জন করে কামালীয়াতে দরজায় পৌঁছে বেলায়ত প্রাপ্ত হতে হলে, ত্বরিকত পন্থীদেরকে ক্বলবের চবকের তালিম পর্যন্ত অতিক্রম করতে হত। কিন্তু ক্বলবের ছবককে শেষের দিক থেকে প্রথমে নিয়ে আসার ফলে বর্তমানে আমাদের সিলসিলায় এ কামালিয়াত ক্বলবের প্রথম ছবক লাভে ত্বরিকত পন্থীরা অলীর মর্যাদায় পৌঁছতে পারে।
এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারেন ক্বলবের ছবক লাভ করার পর কী, একটি মানুষ অলীর দুয়ারে পৌঁচতে পারে? ইন্শাআল্লাহ অবশ্যই পারে। ৩/৪ মাস ত্বরিকতের নির্দিষ্ট অজিফা পড়ার পর ক্বলবের ছবকের জন্য যখন মুরীদ পীরের কাছে আসবে। তখন পীর সাহেব মুরীদকে চোখ বন্ধ অবস্থায়ে মুখোমুখি বসিয়ে তাওয়াজ্জুহ দিবেন।
প্রকৃত পক্ষে পীরের আত্মার শক্তি অর্থাৎ পবিত্র নূর মুরীদের ক্বলবে ঢালবেন এবং মুরীদ তা অনুভব করতে পারবে। হযরত শাহ্ আবদুল আজীজ মোহদ্দেছে দেহলভি (রঃ) “তফ্সীরে ফতহুল আজীজ” এ, পীরের এ আত্মার শক্তিকে ৪ ভাগে ভাগ করেছেন। “এত্তেহাদী” হল সবচেয়ে শক্তিশালী তাওয়াজ্জুহ্ বা আত্মার শক্তি। এই এত্তেহাদী তাওয়াজ্জুহ্ যদি কোন হক্কানী পীর কোন পাপী লোকের ক্বলবেও ঢালেন, তাহলে মুহূর্তের মধ্যে ঐ পাপীলোক অলীও হয়ে যেতে পারে। এখন কোন পীর ক্ষেত্রবিশেষে কোন ধরনের তাওয়াজ্জুহ ব্যবহার করেন এটা তাঁরাই ভাল জানেন। মানুষ পাপ করার ফলে, ক্বলবে গুনাহের একটি কালো পর্দার সৃষ্টি হয়। তখন ঐ অপরিষ্কার ক্বলবে শয়তান জোঁকের মত চিমটে কেটে বসে থাকে। আল্লাহ পাক ফরমান,মানুষের ক্বলবে শয়তান ধোকা দিয়ে থাকে। যখন পীরের আত্মার শক্তি ঐ নূর ক্বলবে পড়ে, তখন ক্বলবের উপর থেকে গুনাহের ঐ কালো পর্দা সরে গিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্বলবে ঐ নূরের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে। এবং ক্বলব সর্বদা আল্লাহ জিকির করতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে যে মুরীদের এই বৈশিষ্ট্যহবে, সে প্রথম ছবক লাভে নিঃসন্দেহে অলীর দরজায় পৌঁছতে সক্ষম হবে। আল্লাহ পাক ফরমান, যে ব্যক্তি খোদার সামনে পরিষ্কার ক্বলব নিয়ে আসবেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ পরিত্রাণ পাবেন না। পীরে কামেলের তাওয়জ্জুর দ্বারা যার ক্বলবে থেকে গুনাহের পর্দা সরে যায়, এবং ক্বলব আল্লাহর জিকির করতে থাকে, মূলত তাঁর ক্বলবই ক্বলবে ছলীম। সুতরাং এখান থেকেও ইমামুত ত্বরিকত হযরত আবদুল বারী (রঃ) এর প্রথম ছবক লাভে অলীর মর্যদা ঘোষণাটির সত্যতার আভাস পাওয়া যায় ।
বর্তমান যুগে মানুষের আয়ু খুবই কম। এ কম আয়ুর মধ্যে যাতে মুরীদেরা সর্বশেষ স্তরের তালিমের ফায়দা লাভ করে কামেল হয়ে ইন্তেকাল করতে পারে, হযরত আবদুল বারী (রঃ) সর্বশেষ স্তরের তালিমকে প্রথমে নিয়ে এসে সেই ব্যবস্থাই করেছেন। তাই সর্বদা বলতেন, “মৃতকে জীবিত করা বড় কারামত নয়, দোযখিকে জান্নাতি বানানোই হল বড় কারামত”
এ সিলসিলায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে কাগতিয়ার পীর সাহেব কেবলার কাছ থেকে ৩/৪টি ছবক লাভ করে ইন্তেকাল করেছেন, এমন কয়েকজন যুবক ভাইয়ের মৃত্যুর র্পূবে, পরে এবং কবরস্থ করার ২/৩ বছর পরও এমন কিছু কিছু ঘটনা এলাকাবাসীর লক্ষ্য করতে পেরছেন, যা স্বনামধন্য আলেমেরা কামেল ব্যক্তির আলামত বলে মত প্রকাশ করেছেন। সে সব ঘটনাবলীর উপযুক্ত প্রমাণাদি এখনো সংরক্ষিত রয়েছে।
হযরত আবদুন কাদের জিলানী (রৎ) এর “সিররুল আস্রার” কিতাবে আছে, হযরত নবী করিম (সঃ) ফরমান,“যে ব্যক্তি ইলমে মারেফাত অর্থাৎ ত্বরিকত শিক্ষা করা অবস্থায় ইন্তেকাল করে, (দাফন করার পর) তাঁর কবরে ২ জন ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা তাকে কিয়মাত পর্যন্ত ইলমে মারেফাত শিক্ষা দিতে থাকেন। ফলে সে ব্যক্তি হাশরের মাঠে আলেম ও আশেক হয়ে উঠবে। এ দু’জন ফেরেশতা বলতে নবী ও অলীর রূহানী শক্তিকেই বোঝানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.